বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা : তখনও তৃণমূল ছাড়েননি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বনমন্ত্রী। কিন্তু বেসুরো। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতাতেও বরফ গলছিল না। তখন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সাহস থাকে তো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডোমজুড়ে দাঁড়িয়ে দেখাক। গো–হারা হারবে।’ কয়েকদিন আগেও কল্যাণ তাঁর উদ্দেশ্যে ফের ‘তুই–তুকারি’ করে বলেছেন, ‘আয় রাজীব, খেলবি আয়। ডোমজুড়েতেই খেলবি আয়।’ নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করার পর শনিবার সেই চ্যালেঞ্জই কল্যাণকে ফিরিয়ে দিলেন অধুনা বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিষ্কার বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জই করলাম। ডোমজুড়েই খেলব। আপনার কত সাহস আছে, দেখান।’
এদিন ডানকুনিতে সভা ছিল বিজেপির। সেই সভার মূল আকর্ষণই ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাঁর নিশানায় ছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ভাবে কাউকে নিশানা করতে রাজীবকে সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু এদিন তা–ই করেন। ফলে এই ঘটনাটিকে রাজনৈতিক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে। এদিন রাজীব বলেন, ‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এত বড় বড় কথা বলেন কী করে? তাঁর কি কোনও আসন থেকে জেতার ক্ষমতা আছে? তাঁকে ভোটাররা দূরের কথা, তাঁর দলেরই অধিকাংশ নেতা ও কর্মী পছন্দ করেন না। মুখের ভাষাও অত্যন্ত খারাপ।’ এর পর তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় শ্রীরামপুরে তৃণমূলের ৪ প্রার্থীর নাম নিয়ে সমীক্ষা হয়েছিল। ওই সমীক্ষার ফলাফলে সবার শেষে নাম এসেছিল তাঁর। তখন ওই দলেরই শীর্ষনেতা ও নেত্রীরা আমাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘শ্রীরামপুর থেকে কল্যাণ জিততে পারবে না। ওঁকে একমাত্র জিতিয়ে আনতে পারো তুমিই। এবার তুমি বলো, সেই দায়িত্ব তুমি নেবে? তোমার বক্তব্য জানাও।’
এর পরই রীতিমতো তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘আর এখন তিনি বলছেন, ‘আয় রাজীব, খেলবি আয়। ডোমজুড়েতেই খেলবি আয়!’ ঠিক আছে, খেলব। আপনার ডোমজুড়েতেই খেলব। আপনার কত সাহস আছে, দেখান। আমি দেখতে চাই। দেখি, আপনি আমাকে হারাতে পারেন কিনা!’ সেই সঙ্গে তাঁর পেশা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ কথাও বলেছেন, ‘তাঁর স্বভাবই হল বড় বড় কথা বলা। সরকারের ওকালতি করেই তাঁর রোজগার হয়।’ রাজীবের এই আক্রমণের জবাব দিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন, ‘ডোমজুড়ে রাজীব চক্রান্ত করেছিল। ২০১৪ সালে ওই আসনে আমি প্রায় ৬৯ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। কিন্তু রাজীবের চক্রান্তের জন্যই আমার জয়ের ব্যবধান কমে গিয়েছিল ২০১৯ সালে। তখন জিতি ৫৫ হাজার ভোটে। রাজীবের সঙ্গে খেলা আমার হবেই।’ উল্লেখ্য, কোন আসনে কে প্রার্থী হতে পারে, সে বিষয়ে এখনও বিজেপি জানায়নি বা ইঙ্গিতও দেয়নি। তবে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ডোমজুড় থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করতে পারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
অন্যদিকে, নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন বলে প্রকাশ্য সভায় ঘোষণা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন সরকারি ভাবে কোনও দলই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি। তাই নন্দীগ্রামে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রার্থী হচ্ছেন, সে কথা নিশ্চিত ও সরকারি ভাবে এখনও বলা যাবে না। তবে যেহেতু মমতাই তৃণমূলের দলনেত্রী, তাই তাঁর কথাই যে শেষ কথা, তা অনুমানের বাইরে নয়। তাই ধরে নেওয়া যায়, নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রার্থী হচ্ছেন। সেই মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী হতে পারেন শুভেন্দু অধিকারীই। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে রাজ্য বিজেপির সহ–সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমাদের দলে প্রার্থী তালিকা রাজ্য নেতৃত্ব চূড়ান্ত করতে পারে না। করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’ অবশ্য একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘কিন্তু আমরা চাই নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীই প্রার্থী হন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে আমরা খুশিই হব।’